রাজশাহী সংবাদ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এক সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশকে এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এক সময়ের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা দেশ থেকে দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে।’ কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সুধীদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি নিজের সংগ্রাম এবং দেশের উত্তরণের গল্প তুলে ধরেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু পরামর্শও দেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। খবর: নিউজবাংলা
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি কোনো মিরাকল নয়, কষ্টার্জিত সফলতা। এটা আমাদের নারী-পুরুষের সম্মিলিত কাজ। আমি শুধু তাদের কাঙ্ক্ষিত পথে পরিচালনার চেষ্টা করেছি।
‘বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে এসেছে সেই অবস্থানে পৌঁছানোর যাত্রাটা সহজ ছিল না। এজন্য আমাকে সারাজীবন অগ্নিপরীক্ষা এবং নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালো রাতে পরিবারের সবাইকে হারানোর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাবাকে তার জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমার মা, তিন ভাই, দুই ভ্রাতৃবধু, চাচাসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশে থাকায় ছোট বোন শেখ রেহানা এবং নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও দীর্ঘ ৬ বছর বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়।’
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবার ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমি ফিরে এসেছি। দেশে ফিরে এসে মানুষের খাবার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু রাজপথে সংগ্রামকালে অন্তত ১৯ বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে ২০০৪ সালের আগস্টে আমার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।’
কাতার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রাম থেকে ভবিষ্যৎ নেতাদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ তুলে ধরতে চাই।
‘পরামর্শগুলো হলো- নেতার মূল্যবোধ থাকতে হবে; লক্ষ্যের প্রতি অটল থাকতে হবে; লক্ষ্য অর্জনে পরিপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে; দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী নেতৃত্ব দিতে হবে এবং সমাজে চেঞ্জ মেকার হতে হবে; জনগণ ও দলের ওপর আস্থা রাখতে হবে; মাতৃত্বের চেতনাকে জাগিয়ে তোলা এবং নতুন ও ভবিষ্যৎকে গ্রহণ করতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘জীবনে ভিশন ও মিশন থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। তাই আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই।
‘স্মার্ট বাংলাদেশে একটি স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট মানবসম্পদ থাকবে। জনগণকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে, যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখতে পারে।’
‘স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আইন পাসের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের ২৩ বছরের স্বাধীনতার সংগ্রাম, স্বাধীনতা অর্জন, বঙ্গবন্ধুর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার প্রচেষ্টা, তার নিহত হওয়া এবং পরবর্তী সামরিক শাসন ও ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের পুনরায় সরকারে ফেরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুললেও ২০০১ সালের নির্বাচনে সরকারে এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতির আরেকটি অন্ধকার যুগ রচনা করে। ‘২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’-এর জন্য দেশকে প্রস্তুত করেছি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক খাতের সব বিভাগে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি লাভ করেছে।’
দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও কেবল দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। যতদিন বেঁচে থাকব ততোদিন সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।’